শিশুদের যত্নে কিছু গুরুত্ব পূণ টিপস
শিশুরা হচ্ছে একটি জাতি ভবিষ্যৎ। তাদের সুস্থতা, মনন শীলতা ও সঠিক বিকাশের উপরে নির্ভর করে একটি দেশের উন্নতি। তাই জন্মের পর থেকেই শিশুর সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। শিশুদের যত্ন শুধুমাত্র খাবার ও পোশাক সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানসিক, শারীরিক, আবেগ ও সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব দেয় দিতে হয়। আজকের বাস্তব জীবনে অনেক বাবা-মা চাইলেও সময় দিতে পারে না আবার অনেক কেই জানে না কিভাবে যত্ন নিতে হয়।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব শিশুদের যত্ন নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে। সঠিক যত্ন ছাড়া শিশুরা সহজে রোগা নিত্য হতে পারে এবং বিকাশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এই জন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার শিশুর প্রতিটি স্তরের যত্নের সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ শিশুদের যত্ন
শিশুদের পরিপূর্ণ পুষ্টি
শিশুর শরীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পরিপূর্ণ পুষ্টি অপরিহার্য। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধে যথেষ্ট। এই দুধে রয়েছে শিশুর প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুণ। এরপর ধাপে ধাপে শিশুর খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হয় ফলমূল, শাক সবজি, ডিম, মা তো দুগ্ধ জাত খাবার। শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি হলে তারা দুর্বল ও প্রবণ হয়ে পড়ে। ভিটামিনের, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে ছয়টা করে। শিশু প্রতিদিন খাদ্য তালিকা তৈরি করার সময় পোস্টটি বিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। শিশুরা যেহেতু বেঁচে খেতে চায়, তাই খাবার কে আকর্ষণ করে পরিবেশন করা ভালো।
স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিশুর হাত মুখ ধোয়া, নখ ছোট রাখ্ কাপড় পরিষ্কার রাখা এসব ছোট ছোট অভ্যাসি তাকে রোগমুক্ত রাখতে পারে। অনেক সময় শিশুর মাটি বা নোংরা কিছু খেয়ে ফেলে, যা থেকে ডায়রিয়া অন্য রোগ হতে পারে শিশু ব্যবহৃত খেলনা ও জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুর গোসলের নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূরণ। ঘাম বা ধুলাবালিতে চর্মরোগ হতে পারে তাই প্রতিদিন গোসল করানো দরকার। টয়লেট প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় ও স্বাস্থ্যবিধি শেখানো জরুরী।
শিশুদের টিকা
শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত চিকিৎসা পরিদর্শন ও প্রয়োজনী টিকারা
নেওয়া বাধ্যতামূলক। জন্মের পর থেকে শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু টিকা নির্ধারিত
আছে যা তাদের মারাত্মক সম্পূর্ণ থেকে রক্ষা করে।, যেমন বিসিজি, পোলি্ হেপাটাইটিস
বিপথেরিয়া ইত্যাদি। সরকারিভাবেও বিনামূল্যে এসব টিকা দেয়া হয়। পাশাপাশি শিশুর
বৃদ্ধি, ওজনে উচ্চ তা পরিমাপ করানো জরুরি। শিশু যদি বারবার অসুস্থ হয় তাহলে
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো উচিত। অনেক অভিভাবক শিশুদের জ্বর বা কাশি হলে নিজেই ওষুধ
দেন, যা ক্ষতিকর হতে পারে
মানসিক বিকাশের যত্ন
শিশুর মানসিক বিকাশ শরীরের বৃদ্ধির মতই গুরুত্বপূর্ণ শিশুর অনুভূতি, চাহিদা ও আচরণ বোঝে সেগুলোর সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হবে। শিশু সঙ্গে কথা বলা, গল্প বলা, একসাথে খেলা করা তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অনেক শিশু কম কথা বলে বা ভয় পায্। এসব ক্ষেত্রে তাদের পাশ থেকে সাহস জোগাতে হবে শিশুকে ভালোবাসা ও গুরুত্ব দেওয়া আর তার আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। অন্যদিকে বেশি শাসন,। গালাগাল বা অবহেলা শিশু মধ্যে নৈতিক মনোভাব তৈরি করে তাই মনোযোগ, সহানুভূতি ও ভালোবাসা দিয়ে শিশুর মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
শিশুর জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের মধ্যেই শিশুর
হরমোন নিঃসর্ মস্তিষ্কের বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নবজাত শিশুর
প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন, আর ২ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুদের কমপক্ষে
10 থেকে 12 ঘন্টা ঘুমানো উচিত।শিশুর ঘুম যেন নিরবচ্ছিন্ন হয়, সেজন্য শান্ত ও
অন্ধকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় মোবাইল বা টিভির আলো শিশুদের ঘুমের
ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ঘুমের আগে স্কিন টাইম করাতে হবে।নিয়মিত একই সময় ঘুমাতে
যাওয়ার শিশু শরীরের জন্য উপকারী।
শিশুদের খেলা ও শরীরে চর্চা
খেলাধুলা শিশুর শরীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বড় ভূমিকা রাখে। বাইরের খেলা
শিশুদের হার ও মাংসপেশী মজবুত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি
খেলার মাধ্যমে শিশুর সামাজিক দক্ষতা ও দলবদ্ধ কাজ শেখার অভ্যাস গড়ে ওঠে।প্রতিদিন
অন্তত এক ঘন্টা খেলার সুযোগ দিতে হবে, যাতে সে আনন্দ পায় এবং শরীর চর্চা হয়।
কম্পিউটারে গেমস বা টিভি দেখা নয়, বরং মাঠের খেল্ লুডু, পাজেল ইত্যাদিতে উৎসাহ
দিতে হবে। অভিভাবক চাইলে শিশুর সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। এতে করে
বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরো দঢ় হয়।
আচর ও শৃঙ্খলা শিখানো
শিশুর মধ্যে ছোট থেকে ভালো আচরণ। নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা শিক্ষা দিতে হবে যেমন ধন্যবাদ, দয়া করে, ক্ষমা করো, এসব শব্দ ব্যবহার ও অভ্যাস করা উচিত শিশুকে শাসনের বদলে শেখানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা ভালো। অন্যদের প্রতি সহানুভূতি, শৃঙ্খলা শিখাতে গল্প, ছড়া ও নিজের আচরণে আচরণ হতে হবে আদর্শ। শিশুর ভুল আচরণকে দোষ না দিয়ে সঠিকভাবে বোঝাতে হবে। অভিভাবকেরা যদি রাগ বা হিংসা আচরণ দেখান, তাহলে শিশু সেভাবেই শিখবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা
বর্তমান যুগে শিশুরা প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বেড়ে উঠছে। তাই তাদের নিরাপদ ভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারে অত্যন্ত অভ্যাস করাতে হবে। মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরী, শিশু যেন অন্য উপযুক্ত কনটেন্ট প্রবেশ না করে, সেজন্য প্যারেন্টাল কনটেন্ট চালু করা যেতে পারে। শিশুরা যেন প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত না হয়, সেজন্য বাস্তব জীবনে আরও বেশি খেলাধুল্ গল্প ও বইয়ের প্রতি উৎসাহ দিতে হয়।
শিশুদের সামাজিকতা ও বন্ধুত্ব
শিশুর মধ্যে সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলার জন্য তাদের অন্য শিশুদের সাথে খেলতে ও কথা
বলতে উৎসাহ দিতে হবে। খেলাধুলা, স্কু্ল পারিবারিক মিলন মেলা এসবের মাধ্যমে শিশুর
যত্ন করা দক্ষতা তৈরি হয়। সামাজিকতা শিশুর আত্মবিশ্বাস ও কমিউনিকেশন স্কেল
বাড়ায়। যদি শিশু খুব লাজুক হয়, তাহলে ধীরে ধীরে তাকে উৎসাহ দিতে হব্ গল্প
বলা, মঞ্চে অংশগ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে।
শিশুদের বাবা মায়ের ভূমিকা
শিশুর যত্নে বাবা-মায়ের ভূমিকা সর্বত্র। বাবা মা যদি সচেতন, দায়িত্ববান ও
ভালোবাসাপূর্ণ হন,তাহলে শিশু সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। শিশুর সব বিষয়ে সরাসরি অংশ
নেয়া, তার অনুভব বোঝা ও প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া অভিভাবক হিসেবে তাদের
দায়িত্ব। অনেক বাবা মা কেবল মাকে দায়িত্ব দেন, জাস্ট সঠিক নয়। বাবা ও মা
দুজনের সমান ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে শিশুর জীবন গঠনে।
শেষ কথাঃ শিশুর যত্ন
শিশুদের যত্ন নেয়া কোন একক কাজ নয়, বরং এটি একটি ধারাবাহিক, ভালোবাসাময় ও দায়িত্বশীল প্রতিক্রিয়া। শারীরিক,মানসিক ও নৈতিক তিনটি দিক সমানভাবে গুরুত্ব দিলে শিশুরা একদিন হয়ে উঠবে সমাজের একজন আদর্শ মানুষ। প্রযুক্তি, খেলাধুল্ পড়াশোনা, ঘুম সবকিছুতেই ভারসাম্য থাকা জরুরি। ব্লগে আলোচনা করার বিষয়গুলো বাস্তব জীবনে ওর অনুসরণ করলে শিশুদের যত্ন নেওয়া সহজ হবে এবং তারা সুস্থ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url