গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থায় খাওয়ার উপযোগী ফলভিটামিন ও খনিজের উৎস হিসেবে ফলের গুরুত্বশিশুর সঠিক বিকাশে ফলের ভূমিকাকোন ফল কোন সমস্যায় উপকারী ফল খাওয়ার সতর্কতা ও সঠিক নিয়ম
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ফলমা ও শিশুর সুস্থতার জন্যভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুরহজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিদৈনিক ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
সূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
- আপেল
- কলা
- কমলা
- পেয়ারা
- আম
- আঙুর
- ডাবের পানি সহ নারকেল
- বেদানা
- স্ট্রবেরি ও বেরিজাতীয় ফল
- কিউই
- তারবুজ
- খেজুর
- কতটুকু ফল খাবে
- শেষ কথাঃগর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
- সচারাচর প্রশ্নের উত্তর
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা নির্ভর করে সঠিক পুষ্টির উপর। তাই কোন খাবার খাবেন আর কোনটা খাবেন না তা জানা খুবই জরুরি। বিশেষ করে ফল মা ও শিশুর জন্য প্রাকৃতিক ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রধান উৎস। তাই গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তা জানা প্রত্যেক গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই দরকার। পুষ্টিকর ফল খেলে শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মায়ের শরীরও সুস্থ থাকে। তবে সব ফল নিরাপদ নয়। কিছু ফল সঠিক পরিমাণে খেতে হয়, কিছু খেতে হয় সাবধানে। তাই এই ব্লগে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে এবং কোন ফল কীভাবে উপকার করে। যাতে মা নিশ্চিন্তে সুন্দর ও সুস্থ একটি গর্ভকাল কাটাতে পারেন।
আপেল
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার তালিকায় আপেল প্রথম সারিতে থাকে। আপেল ভিটামিন C, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি রক্তস্বল্পতা কমাতে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, আপেলের ফাইবার সেই সমস্যা কমাতে কার্যকর। এছাড়া আপেলে থাকা পলিফেনল শিশুর ফুসফুসের গঠন ভালো রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী। সংরক্ষণকৃত বা মোম করা আপেল অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিত। পেটে এসিডিটি থাকলেও আপেল আরাম দেয়। তাই একজন মা নিশ্চিন্তে আপেলকে ডায়েটে রাখতে পারেন।
কলা
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হলো কলা। এতে রয়েছে ভিটামিন B6, পটাশিয়াম ও ফাইবার। এসব উপাদান বমিভাব কমাতে এবং নার্ভ শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। পটাশিয়াম শরীরের পানি ভারসাম্য বজায় রাখে এবং পায়ে ব্যথা কমায়। যেসব মা দুর্বলতা অনুভব করেন তাদের জন্য কলা এনার্জির দারুন উৎস। গর্ভাবস্থায় মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, কিন্তু মিষ্টির পরিবর্তে একটি কলা খেলে ক্ষুধা মেটার পাশাপাশি রক্তের শর্করাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে পরিমাণমতো খেতে হবে। প্রতিদিন অন্তত একটি কলা খাওয়া মা ও শিশুর জন্য উপকারী।
আরও পড়ুনঃমাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
কমলা
কমলায় ভিটামিন C প্রচুর থাকে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং লৌহ শোষণে সাহায্য করে। তাই রক্তস্বল্পতা কমাতে কমলা খুবই উপযোগী। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার মধ্যে কমলা সবচেয়ে সতেজকর ফল। কমলার পানি শরীরে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং ত্বক ভালো রাখে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিশুর কোষ গঠন সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া কমলায় ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের সঠিক গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে কম খাওয়া ভালো।
পেয়ারা
পেয়ারা সুলভ ও পুষ্টিকর একটি ফল। এতে ভিটামিন C, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর থাকে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার মধ্যে পেয়ারা একটি আদর্শ ফল কারণ এটি রক্তে সুগার বাড়ায় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারায় থাকা লাইকোপিন শিশুকে জন্মগত ত্রুটি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলেও পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। তবে পেয়ারা সবসময় ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিত এবং বীজ বেশি না চিবানোই ভালো।
আম
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফল আম গর্ভাবস্থায় খুবই উপকারী। আমে থাকা ভিটামিন A ও C শিশুর চোখ ও ত্বকের বিকাশে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে এই প্রশ্নে আম একটি চমৎকার বিকল্প। আমের ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। তবে আমে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস মায়েদের পরিমিত খেতে হবে। পাকা আম খাওয়া ভালো, অপাকা আম কখনও কখনও অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে।
আঙুর
আঙুর ভিটামিন A, C, K এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা মা ও শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার তালিকায় আঙুর গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি হজমে সহায়তা করে এবং রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। কালো আঙুর বিশেষভাবে উপকারী কারণ এতে রেসভারাট্রল নামক উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তবে বেশি খেলে ডায়রিয়া হতে পারে তাই পরিমাণমতো খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে
ডাবের পানি সহ নারকেল
ডাবের পানি গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতা দূর করতে একটি দারুণ পানীয়। এতে ইলেক্ট্রোলাইট, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম থাকে। ডাবের শাঁসও পুষ্টিকর। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তাতে নারকেল একটি নিরাপদ ও উপকারী খাবার। ডাবের পানি বমি ভাব কমায় এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তবে অতিরিক্ত শাঁস খেলে ওজন বাড়তে পারে।
বেদানা
বেদানায় আয়রন, ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার মধ্যে বেদানা অন্যতম। এটি প্লাসেন্টাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং শিশুর কোষ গঠন ভালো রাখতে সহায়তা করে। বেদানার দানা ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
বেরিজাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি ইত্যাদি ফল ভিটামিন C ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। এগুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার মধ্যে বেরি একটি স্মার্ট চয়েস। টাটকা বা ফ্রোজেন, দুইভাবেই খাওয়া যায়। অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃনিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
কিউই
কিউই ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন K সমৃদ্ধ। এটি হজমশক্তি ভালো রাখে এবং নবজাতকের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে বিষয়টি বিবেচনা করলে কিউই একটি বিশেষ ফল হিসেবে ধরা যায়।
তারবুজ
তারবুজে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এটি পায়ের ব্যথা কমায় এবং ক্লান্তি দূর করে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে এ প্রশ্নে তারবুজ নির্ভয়ে খাওয়া যায়। তবে সন্ধ্যার পর কম খাওয়া ভালো।
খেজুর
খেজুর এনার্জি বাড়ায় এবং রক্তশূন্যতা কমাতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে খেজুর জরায়ুর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তাতে খেজুর একটি দারুণ পুষ্টিকর বিকল্প।
কতটুকু ফল খাবেন
প্রতিদিন ২ থেকে ৩ রকম ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো।যে ফলগুলো কম খাবেন বা এড়িয়ে চলবেনআনারস, কাঁচা পেঁপে এবং অতিরিক্ত আঙুর।
শেষ কথাঃগর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থা একটি আনন্দের সময় এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই সময়টিকে আরও নিরাপদ ও সুন্দর করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তা জেনে এবং পরিমাণমতো ডায়েটে রাখলে মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত হয়। তবে যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে পরিষ্কার রাখা ও পরিমাণ জেনে খাওয়া জরুরি। যদি কোনো ফল খেলে অস্বস্তি হয় তাহলে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজের শরীর ও বাচ্চার জন্য সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
সচারাচর প্রশ্ন ও উত্তর
1) গর্ভাবস্থায় কি প্রতিদিন ফল খাওয়া দরকার?
হ্যাঁ, প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বালা ফল খেলে পুষ্টি নিশ্চিত হয়।
2) কোন ফলগুলো বেশি উপকারী?
আপেল, কমলা, পেয়ারা, বেদানা, কলা বেশি উপকারী।
3) গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া ঠিক কি না?
হ্যাঁ, তবে পরিমাণমতো।
4) ডাবের পানি খাওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
5) পেঁপে কি খাওয়া যায়?
কাঁচা পেঁপে না, পাকা পেঁপে পরিমিত খেতে পারবেন।
6) আনারস কি ক্ষতিকর?
অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে, তাই কম খেতে হবে।
7) কিউই কি প্রতিদিন খাওয়া যায়?
হ্যাঁ, খুবই উপকারী।
8) আঙুর কি সবসময় নিরাপদ?
হ্যাঁ, তবে অতিরিক্ত নয়।
9) কোন ফল বেশি ধুয়ে খেতে হবে?
বেরিজাতীয় ফল সবসময় ভালোভাবে ধুতে হবে।
10) ডায়াবেটিস থাকলে কি ফল খাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, পরিমাণমতো এবং চিকিৎসকের পরামর্শে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url