ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার ১০টি উপায়
ত্বক মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও তারুণ্য কমে যেতে থাকে। দূষণ, অনিয়মিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে ত্বকে অকাল বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি।
যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান, তাদের জন্য এই উপায়গুলো অত্যন্ত কার্যকর। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার ১০টি পরীক্ষিত উপায়, যা নিয়মিত অনুসরণ করলে ত্বক থাকবে সতেজ, টানটান এবং দাগমুক্ত। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই দারুণ কার্যকরী কৌশলগুলো।
সূচিপত্রঃত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার ১০টি উপায়
- ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
- ঘুম পর্যাপ্ত ও নিয়মিত রাখুন
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম কর ত্বকের জন্য ব্যায়ামের উপকারিতা
- ত্বকের বার্ধক্য রোধে অভ্যাস পরিবর্তন
- মানসিক চাপ এবং ত্বকের সম্পর্ক
- নিয়মিত স্ক্রাব ব্যবহার করুন
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
- শেষ কথাঃর্ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখার উপায়
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে পানি পানের বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে শরীর ভিতর থেকে পরিষ্কার থাকে এবং তা ত্বকে প্রতিফলিত হয়। হাইড্রেটেড ত্বক থাকে কোমল, উজ্জ্বল এবং দাগমুক্ত। পানি শরীরের টক্সিন বের করে দেয়, ফলে ব্রণ, র্যাশ বা অ্যালার্জির প্রবণতা কমে যায়। অনেকেই বাইরে থেকে নানা প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও ভিতর থেকে পানির অভাব থাকলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় এবং বলিরেখা দ্রুত দেখা দেয়। ঠোঁট ফাটা, চামড়া উঠা এসবের পেছনেও পানিশূন্যতা দায়ী। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। খাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করাই অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা ও তারুণ্য বজায় রাখবে। পানি ছাড়া কোনো সৌন্দর্য রক্ষার উপায় নেই।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি ত্বকের কোষ নষ্ট করে দেয়, যার ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায় এবং বলিরেখা পড়ে। তাই প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুব জরুরি, এমনকি মেঘলা দিনেও। সানস্ক্রিন ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তরকে রক্ষা করে এবং দীর্ঘমেয়াদি তারুণ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। SPF ৩০ বা তার বেশি মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং প্রতি দুই ঘণ্টা পর পুনরায় ব্যবহার করুন, বিশেষ করে বাইরে থাকলে। মুখ, গলা, হাত, এমনকি পায়েও লাগানো জরুরি। অনেকেই মনে করেন ঘরে থাকলে সানস্ক্রিনের দরকার নেই, কিন্তু ঘরের জানালার কাঁচ দিয়েও UV রশ্মি ঢুকে পড়ে। তাই প্রতিদিনের রুটিনে সানস্ক্রিনকে বাধ্যতামূলক করুন। এটি ত্বককে কালো হওয়া, ছোপ পড়া ও আগাম বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে।
ঘুম পর্যাপ্ত ও নিয়মিত রাখুন
সুন্দর ও তারুণ্যভরা ত্বকের জন্য পরিপূর্ণ ঘুম অত্যন্ত জরুরি। রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে ত্বক ক্লান্ত ও মলিন দেখায়। ঘুমের সময় শরীর ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করে। যারা কম ঘুমান, তাদের চোখের নিচে কালি পড়ে, বলিরেখা দেখা দেয় এবং ত্বক তার উজ্জ্বলতা হারায়। নিয়মিত ঘুমের অভাবে ত্বকে ব্রণ বা র্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। টিভি, মোবাইল বা লাইট বন্ধ করে শান্ত পরিবেশে ঘুমান। ঘুম না হলে শরীরে করটিসল হরমোন বৃদ্ধি পায় যা ত্বকের ক্ষতি করে। তাই ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমকে গুরুত্ব দিন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
ত্বক ভিতর থেকে পুষ্টি না পেলে কোনো প্রসাধনিই ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনতে পারে না। ফল, শাকসবজি, বাদাম, ডিম, দুধ, মাছ ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখে। ভাজাপোড়া, প্রসেসড ও চিনি-যুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন, কারণ এসব খাবার ত্বকে ব্রণ, দাগ এবং অকাল বার্ধক্য সৃষ্টি করে। নিয়মিত ডায়েটে টমেটো, গাজর, শাক, কলা, আমন্ড, আভোকাডো রাখুন। এই খাবারগুলো কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে যা ত্বকের弹性 বজায় রাখে। তাই সুন্দর ও তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অভ্যাস করুন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
ত্বককে আর্দ্র রাখা তারুণ্য ধরে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। প্রতিদিন ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক থাকে কোমল ও মসৃণ। বিশেষ করে শীতকালে ত্বক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়, তখন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ ধোয়ার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার লাগালে এটি ত্বকের কোষে পানি ধরে রাখে এবং বলিরেখা রোধ করে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের জন্য অয়েল-ফ্রি বা জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার ভালো। নিয়মিত ব্যবহার ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং বয়সের ছাপ পড়া রোধ করে। এই প্রাকৃতিক বা কেমিকেল-বেসড স্কিন কেয়ার পণ্যের মাধ্যমে আপনি সহজেই ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে পারবেন
নিয়মিত ব্যায়াম কর ত্বকের জন্য ব্যায়ামের উপকারিতা
নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, ত্বকের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়ামের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা ত্বকের কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়। এর ফলে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, সতেজ ও টানটান। ব্যায়ামের সময় ঘামের মাধ্যমে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায়, যা ব্রণ ও র্যাশ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম, হাঁটা বা হালকা কার্ডিও ত্বকে তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং স্ট্রেস কমায়, যা ত্বকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, তাদের ত্বক দ্রুত নিস্তেজ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা দীর্ঘদিন বজায় থাকবে।
ত্বকের বার্ধক্য রোধে অভ্যাস পরিবর্তন
ধূমপান এবং অ্যালকোহল ত্বকের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই দুইটি অভ্যাস ত্বকের কোষ ধ্বংস করে দেয় এবং কোলাজেনের গঠন ব্যাহত করে, ফলে ত্বকে বলিরেখা ও ঝুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ধূমপানের ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে ত্বক মলিন ও রুক্ষ হয়ে যায়। অ্যালকোহল শরীরকে পানিশূন্য করে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বকে। এটি ত্বককে শুকিয়ে ফেলে এবং মুখে ফোলাভাব ও লালচে ভাব দেখা যায়। তাই ত্বকের তারুণ্য রক্ষা করতে হলে এই ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে সরে আসা অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলে নিজেকে অভ্যাসগত পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। পরিষ্কার খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকলেই ত্বক তরতাজা থাকবে।
মানসিক চাপ এবং ত্বকের সম্পর্ক
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। স্ট্রেসের কারণে শরীরে করটিসল হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ত্বকে ব্রণ, র্যাশ, ফুসকুড়ি এবং বলিরেখা সৃষ্টি করে। নিয়মিত মানসিক চাপ থাকলে ত্বক নিস্তেজ, মলিন ও অসুস্থ দেখায়। স্ট্রেসের প্রভাব ত্বকে খুব দ্রুত পড়ে এবং তারুণ্য কমে যায়। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও পছন্দের কাজ করুন। প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজেকে দিন, নিজেকে ভালোবাসুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোও স্ট্রেস বাড়াতে পারে, তাই তা কমাতে হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রকৃতিতে ঘোরাফেরা এবং হাসিখুশি মনোভাব মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মনের শান্তি ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে, তাই সুস্থ ত্বকের জন্য মানসিক চাপ কমানো আবশ্যক।
নিয়মিত স্ক্রাব ব্যবহার করুন
ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ এবং ধুলাবালি ত্বকের তারুণ্য কমিয়ে দেয়। নিয়মিত স্ক্রাব ব্যবহার করলে এই মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বক পরিষ্কার ও প্রাণবন্ত হয়। ঘরোয়া স্ক্রাব হিসেবে মধু, চিনি ও লেবুর মিশ্রণ খুবই কার্যকর। সপ্তাহে ২ বার স্ক্রাব করলে ত্বক দাগমুক্ত ও কোমল থাকে। স্ক্রাব ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পরবর্তী ব্যবহৃত ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম সহজে শোষিত হয়। তবে অতিরিক্ত স্ক্রাব করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়, তাই পরিমিত ব্যবহার জরুরি। তৈলাক্ত ত্বকে স্ক্রাব বিশেষ উপকারী কারণ এটি পোরস পরিষ্কার করে এবং ব্রণ রোধ করে। নিয়মিত স্ক্রাবিংয়ের মাধ্যমে ত্বকের টানটান ভাব বজায় থাকে এবং তারুণ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই স্কিন কেয়ার রুটিনে স্ক্রাব রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
ত্বকে তারুণ্য বজায় রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের কোষকে মুক্ত মৌল থেকে রক্ষা করে এবং কোষ ধ্বংসের প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ভিটামিন সি, ই, গ্রিন টি, বেরি জাতীয় ফল ও আঙ্গুরে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই উপাদানগুলো ত্বককে ভিতর থেকে রক্ষা করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করে। বর্তমানে বাজারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত নানা ক্রিম, সিরাম ও ফেসপ্যাক পাওয়া যায়। তবে ঘরোয়া উপায়ে যেমন লেবুর রস, টমেটো, মধু ইত্যাদিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে কাজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত সিরাম ব্যবহার করলে ত্বকের কোষ দ্রুত পুনর্গঠন হয়। তাই স্কিন কেয়ারে এই উপাদানগুলো যোগ করুন এবং ত্বকের তারুণ্য দীর্ঘদিন ধরে রাখুন।? এছাড়া অকালেও অনেকেই মুখে বার্ধক্য চাপ পড়ে। বার্ধক্যের ছাপ ওঠাতে কি করবেন?
শেষ কথাঃর্ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখার উপায়
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা কোনো জাদু নয়, বরং এটা প্রতিদিনের নিয়মিত যত্ন এবং সচেতনতার ফল। যারা প্রতিদিন কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করেন, যেমন পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, সানস্ক্রিন ব্যবহার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা তারা সহজেই তাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে পারেন। বয়স বাড়লেও ত্বক যেন সতেজ, প্রাণবন্ত ও টানটান থাকে, সেটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আজকের আলোচিত ১০টি উপায় নিয়মিত অনুসরণ করলে শুধু ত্বকই নয়, পুরো শরীরও থাকবে সুস্থ ও তরতাজা। মনে রাখবেন, বাহ্যিক রূপচর্চার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যত্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুস্থ জীবনযাপন গড়ে তুলুন, প্রাকৃতিক উপায়কে প্রাধান্য দিন এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। তাহলেই আপনি ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url